সীতাকুন্ড_ভ্রমণ 2 পর্ব
২য় দিন গন্তব্য ছিল মহামায়া লেক, গুলিয়াখালি ও বাশবাড়িয়া। সকাল ৭ টায় উঠে সকালের নাস্তা করে নেই পরটা আর ভাজি দিয়ে। সেই সৌদিয়া রেস্তোরাঁ থেকেই। নাস্তা শেষে রওনা হলাম কিন্তু আজকেও ছিল সেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির হতাশা। বৃষ্টি গুড়ি গুড়ি বললে ভুল ই হবে কারন বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিজে গেলাম। তাই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম আর মনে মনে আল্লাহর কাছে বলতে লাগলাম বৃষ্টি নিয়ে যাও। আজকে লাগবে না। বৃষ্টি একটু কমে গেলেই আমরা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে মিরসরাই বাজার নামি। ভাড়া জন প্রতি ২০ টাকা। লেগুনা তেও যাওয়া যায় তবে ভাড়া ৩০টাকা।
তারপর সেইখান থেকে রিজার্ভ অটো করে চলে গেলাম সোজা মহামায়া ইকু পার্ক এর গেইট এর সামনে। ভাড়া সবার থেকে নিল ১০টাকা কিন্তু আমাদের থেকে নিল ১৫+১৫=৩০ টাকা। 😑😑
যাইহোক ১০টাকা করে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। খুব ভালোই লাগছিল। সকাল সকাল হওয়াতে আমরা ছাড়া তখন আর কেউ ছিল না। সব আমাদের ই ছিল। আমার এইখানে আসার উদ্দেশ্য ছিলো কায়াকিং করা তাই জলদি করে ঘাটে নেমে গিয়ে ঠিক করলাম। স্টুডেন্ট কার্ড দেখানোর পর ভাড়া বলল ২৫০টাকা / ঘন্টা। শুনেছিলাম আরো কম। যাইহোক আজ উনাদের ই দিন ছিল🙄😣। পরে তারা সব নিয়ম টিয়ম যা ছিল সব বুঝিয়ে দিল আর আমরা নেমে পরলাম পানিতে। লাইফ জ্যকেট দিয়ে দেয় তারা, তাই খুব সেইফ। ২পাশে পাহাড় মাঝ বরাবর চলে গেছে সবুজ পানির লেক টি। পুরো টা জায়গা জুড়ে শুধু আমরা ছিলাম সেইখানে। মৃদু বাতাস তার উপর নিজের কায়াকিং করার অভিজ্ঞতা ২ টো মিলে অসাধারণ এক অনুভুতি হচ্ছিল। পুরো ১ ঘন্টা নিজেদের প্রকৃতির কাছে সোপে দিয়েছিলাম। আমার দূয়া কবুল করে বৃষ্টি সেইদিনের মত নিয়ে নিয়েছিল। আমি তো আনন্দে আপ্লুত 😄😄।
যাইহোক কায়াকিং শেষে তীরে ফিরে এলাম। এইখানে আরও কিছুক্ষণ ছবি তুল্লাম, ঘুড়লাম। পাহাড়ের ওপরে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে সেখান থেকে লেক টি খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়। ২ পাশে ঝাউ গাছের সারি আর মেঘলা আবহাওয়া বোনাস এর ওপর বোনাস।
এবার ফেরার পালা। লেক টিকে বিদায় জানিয়ে একই ভাবে চলে এলাম সীতাকুন্ড বাজার। সেইখান থেকে দুপুরের নাস্তা সেরে রউনা হলাম আহ! গুলিয়াখালির উদ্দেশ্যে। 😍
সীতাকুন্ড বাজার থেকেই একটি অটো রিজার্ভ করে নেই। ভাড়া গুনতে হয়েছে ১২০টাকা। শেয়ারিং এ গেলে খরচ কমে আসতো জন প্রতি ২০টাকা ভাড়া।
প্রায়১৫মিনিট পর সেই কাংখিত জায়গায় পৌছালাম। গিয়ে মাথায় হাত। কারণ সেই সৌন্দর্য্য দেখতে হলে দিতে হবে কাদায় গড়াগড়ি 😣😣। শুরু করলাম আমাদের যাত্রা। জায়গা টি খুবি পিচ্ছিল। অনেক সাবধানে হাটতে হয়েছে, অনেক ধিরে ধিরে। অনেক বার এপাশ ওপাশ করেছি। যেদিকে ঘাস সেদিক থেকে চলার চেস্টা করেছি। এতে চলা অনেক সহজ হয়েছে। হাটছি তো হাটছি এই পথ যে আর শেষ হয় না। কতক্ষণ হেটেছি মনে নেই।
শেষ মেশ পৌঁছে গেলাম সবুজের গালিচা গুলিয়াখালি। কি অপরূপ দেখতে। সৃষ্টিকর্তা নিজের হাতে খুব যত্ন করে সৃষ্টি করেছেন এই জায়গা টি। আসতে আসতে অন্ধকার হয়ে গেছিল। আমরা সুর্যাস্ত গুলিয়াখালি তেই দেখেছি। আহ! এর জন্যেই আমাদের বেচেঁ থাকা। সুর্যি সমুদ্দ্রে ডুব দিল। অন্ধকারে আসতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আসার সময় একটা সাপ 🐍পরেছিল আমাদের পথে। একটু ভয় পেয়েছিলাম। আমি আমার জীবনে এই জিনিসটাই ভয় পাই সবচেয়ে বেশি। পাশ কাটিয়ে চলে আসি। ওকে অর মতই থাকতে দিলাম। সেইখান থেকে ফিরতে দেরি করেছি ইচ্ছেকরেই কারণ অটো ওয়ালা বলেছিল বাশবাড়িয়া ঢুকতে দিচ্ছে না কারণ কিছুদিন আগেই কয়েকজন ছেলে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছিল বলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আসলে সেটা কতটা সত্যি সেটা তো ফিরেই জানতে পারলাম কিন্তু তখন করার কিছু ছিল না। আমার সেই লোহার ব্রীজে আর হাটা হল না😣। আফসোস ও তেমন হয় নি, কারণ গুলিয়াখালি থেকে একঢালা সৌন্দর্য্য নিয়ে এসেছিলাম দু চোখ ভরে। 👀🌱
ফিরার সময় অনেকেই ছিল তাই অটো শেয়ার করে সীতাকুন্ড বাজারে চলে আসি। ভাড়া জন প্রতি ২০টাকা।
ওহ, আমরা হোটেল চেক আউট করে ব্যাগ ওখানেই রেখে গিয়েছিলাম পরে নিয়ে এসে হানিফ টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রউনা হই। গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে রাত ১২টা বেজেছিল।
একটা কথা না বললেই নয়, আমরা যে হোটেলে থেকেছিলাম ( হোটেল সৌদিয়া) সেখানকার ম্যনেজার ও মামা খুবই আন্তরিক ছিলেন। মালিক পর্যন্ত খুবি অনুগ্রাহী ছিলেন। আমরা চেক আউট করার পর ও তারা তাদের হোটেলে আমাদের জামা চেঞ্জ করার সুযোগ দেয়। খাওয়ার হোটেলের পরিবেশে আমার একটু সমস্যা হওয়ায় তারা তাদের রুমে নিয়ে খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। উনাদের হোটেলেই আমরা ব্যাগ রেখে ঘুরতে আসি এবং তারা ব্যাগ গুলি বিস্বস্ততার সাথে ফিরিয়ে দিয়েছে। ম্যনেজার আর অওনার ২জনের ব্যবহার ই অমায়িক ছিল। ☺☺
<<<এক নজরে খরচ সমূহ>>>
××××ঢাকা - সীতাকূন্ড - ঢাকা =
এ. সি বাস (১০০০+১০০০)×২ =৪০০০ (আমাদের এই খরচ হয় নি অবশ্য, ফ্রি )××××
সকালের নাস্তা = ৮০
দুপুরের খাবার = (১২০+১২০) ×২ = ৪৮০
রাতের খাবার = ১২০+১২০ = ২৪০
হোটেল ভাড়া = ১০০০
সীতাকুণ্ড বাজার টু চন্দ্রনাথ(রিজার্ভ অটো ) = ৮০
চন্দ্রনাথ টু সীতাকুণ্ড বাজার (২০+২০) = ৪০
সীতাকুণ্ড বাজার টু মিরসরাই (২০+২০) = ৪০
মিরসরাই টু মহামায়া লেক (১৫+১৫) = ৩০ (একচুয়াল ভাড়া জন প্রতি ১০ টাকা)
মহামায়া লেক এন্ট্রি ফি (১০+১০)=২০
কায়াকিং = ২৫০ (২জনের)
মহামায়া লেক টু মিরসরাই (রিজার্ভ অটো) = ৮০
মিরসরাই টু সীতাকুণ্ড বাজার (২০+২০) = ৪০
সীতাকুন্ড বাজার টু গুলিয়াখালি (রিজার্ভ অটো) = ১২০
গুলিয়াখালি টু সীতাকুণ্ড বাজার (২০+২০)= ৪০
২জনের মোট খরচ =
(৮০+৪৮০+২৪০+১০০০+৮০+৪০+৪০+৩০+২০+২৫০+৮০+৪০+১২০+৪০) = ২৫৪০
{৪জনের গ্রুপ হলে খুব সুন্দর হয়। এতে খরচ আরো কমে যাবে। }
টিওবির বদৌলতে সব জায়গা আমাদের কাছে পরিচিত হচ্ছে, সেখানে ঘুরতে গিয়ে এক রাশ আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরি। কিন্তু মনে মনে নিজেদের প্রতিই ঘৃণা জন্মায় যখন এত সুন্দর পরিবেশ টিকে ঘুরতে যাওয়ার নামে নোংরা করে চলে আসে৷ রেখে আসে তাদের স্বৃতি চিহ্ন।
দয়া করে কেউ পরিবেশ নস্ট করবেন না। আমাদের দেশ আমাদের ই দায়িত্ব একে সুন্দর রাখা।নিজেদের সাথে পলি ব্যাগ রাখবেন যাতে সেখানে ময়লা ফেলতে পারেন।☺☺ আসুন সচেতন হই।