MY JOURNEY
অনেক সময় লাগবে চিন্তা করে যারা নেপালে কোন ট্রেকে যাবার ব্যাপারে ভাবতে পারেন না তাদের জন্য গোসাইকুন্ড ভাল একটি অপশন হতে পারে। প্রথমবারের মত যারা অতি উচ্চতায় নিজেকে যাচাই করতে চান তাদের জন্যেও এটি একটি আদর্শ ট্রেক।
এই বছরের মে মাসে আমি নেপালের লাংতাং সার্কিট ট্রেক করেছিল। আমার ট্রেকের একটি অংশ ছিল এই গোসাইকুন্ড ট্রেক। আমি ট্রেক শুরু করেছিলাম ধুনচে থেকে। সেখান থেকে গোসাইকুন্ড হয়ে লরেবিনা পাস অতিক্রম করে আমি চলে গিয়েছিলাম হেলাম্বু। যাদের হাতে সময় আছে তারা গোসাইকুন্ডের সাথে হেলাম্বু ট্রেক টাও করতে পারেন- এটিও একটি অসাধারণ ট্রেইল। হেলাম্বুর জন্য আপনার হাতে অতিরিক্ত ৪ দিন সময় থাকলেই যথেষ্ট।
কাঠমন্ডু থেকে গোসাইকুন্ড ট্রেকের ইটিনারি:
[১] কাঠমন্ডু থেকে ধুনচে- প্রায় ৬-৭ ঘন্টার বিরক্তিকর বাস জার্নি
[২] ধুনচে থেকে দেওরালি (২৫০০মিটার)- প্রায় ৩ ঘন্টার ট্রেক
[৩] দেওরালি থেকে চোলাংপাতি (৩৫০০ মি) - ৪-৫ ঘন্টা ট্রেক
[৪] চোলাংপাতি থেকে গোসাইকুন্ড ( ৪৩৮০ মিটার - ৪-৫ ঘন্টা ট্রেক
এই ইটিনারিতে ট্রেকটি করতে কাঠমন্ডু থেকে কাঠমন্ডু খুব বেশী হলে ৬-৭ দিন লাগবে। এই ট্রেইলে কিছুদূর পরপরই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এই ট্রেইলটি খুব একটা কঠিন নয়। পথের শুরু হয়েছে খুব সুন্দর একতি রডেডেনড্রন বনের মধ্য দিয়ে। ট্রেইলের দ্বিতীয় দিনই আপনি পাহাড়ের একেবারে রিজলাইনে পৌঁছে যাবেন। দুইপাশে থাকবে হিমাওয়ের রেঞ্জগুলো। কিন্তু যেহেতু অতি উচ্চতায় উঠছেন সেখানে অক্সিজেনের অভাবে আপনি খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এই ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন। 'একিউট মাউন্টেনিয়ারিং সিকনেস' এর লক্ষনগুলো ভালভাবে জেনে নিবেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই স্বাদু হ্রদের পানি অনেক পবিত্র। এই হ্রদের ঠান্ডা পানিতে গোসল করে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এখানে পাপমোচনের জন্য আসেন। পুরো গোইসাইকুন্ড অঞ্চলে একটি দুটি নয়, ছোট বড় মিলিয়ে এমন হাই অল্টিটিউড লেক আছে প্রায় শ'খানেক।
যারা পর্বতারোহণে আগ্রহী, সেই সাথে এক্সপ্লোরেশনে মজা পান তাদের জন্য গোসাইকুন্ড অনেক ইন্টারেস্টিং একটা জায়গা। প্রায় প্রতিটি পাহাড়ের ভাঁজেই একটি দুটি করে লেক লুকিয়ে আছে। এছাড়া এখানে ৫ হাজার মিটার উচ্চতার সুরিয়া পিক সহ ৪৫০০ থেকে ৪৯০০ মিটারের অসংখ্য চূড়া রয়েছে। এই চুড়াগুলোতে আরোহণ করে নিজেদের দক্ষতা ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এখানে আবহাওয়া যখন তখন পরিবর্তন হয়ে যায়। তিন চার দিনের ট্রেক বলে তাই অবহেলা করার সুযোগ নেই। হাই অল্টিটিউডের জন্য প্রয়োজনীয় সব জামা কাপড় নিয়েই ট্রেক করুন।
খরচ:
কাঠমন্ডু থেকে ধুনচে বাসে করে যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাগবে। আপনি যদি নিজে মাছাপোখারি বাস পার্কে গিয়ে টিকেট কেটে আসেন তাহলে ৫০০ টাকা পড়বে। আবার থামেলের কোন এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট করলে ১০০ টাকা বেশী পড়বে।
ধুনচে থেকে শুরু করে গোসাইকুন্ড পর্যন্ত থাকা খাওয়ার বেশ ভাল ব্যবস্থা আছে। নেপালের ট্রেকগুলোতে খেয়াল রাখবেন নিচ থেকে যত উপরের দিকে উঠবেন খাবারের দাম তত বাড়তে থাকবে। ট্রেকের শুরুর দিকে নেপালি থালি ( ভাত, সবজী, ডাল, পাঁপর, আচার) এর দাম ২০০-২৫০ রুপি পড়বে, যত উপরে উঠতে থাকবেন সেটা বাড়তে থাকবে। গোসাইকুন্ডে সেই একই থালির দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৪৫০-৫০০ রুপি (সিজন ভেদে)। আর রাতে থাকার জন্য অন এভারেজ ১৫০-২০০ রিপি ধরে রাখতে পারেন। আর প্রায় সব কটি হোটেল/লজ/হোম স্টে তে খাবার খেলে রাতে থাকার খরচ অনেকটাই কমিয়ে রাখে। এই ব্যাপারে ভালভাবে একটু দামাদামি করে নিবেন।
প্রতিদিনের খরচ একদম নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তারপরেও নেপালে থাকা ও তিনবেলা মিলিয়ে প্রতিদিন ট্রেইলে অন এভারেজ আপনার বাজেট ১০০০-১২০০ রুপি থাকলেই যথেষ্ট।
পারমিট:
গোসাইকুন্ড লাংতাং ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে পড়েছে। এই অঞ্চলে ট্রেক করার জন্য একটি পারমিট নিতে হয়। এটি আপনি কাঠমন্ডু থেকেও নিতে পারেন। আবার ধুনচে পৌঁছানোর আগে একটি চেকপোস্ট আছে সেখান থেকেও নিতে পারেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য এই পারমিট ফি নেপালি ১৮০০ রুপি।
** এই চেকপোস্টে নেপালি আর্মি সবার লাগেজ/ব্যাকপ্যাক চেক করে। এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে ব্যাকপ্যাক করবেন। সেই সাথে পাসপোর্ট ও পারমিট এর কাগজ সবসময় সাথে রাখবেন। কয়েকটি জায়গায় নাম ধাম এন্ট্রি করাতে হবে।
বিদ্রঃ আয়েশ করে ঘুরে বেড়াতে যান আর কষ্ট করে ট্রেকিংয়ে যান, কখনোই আপনার ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। ট্রেইলগুলোতে বিশেষ করে প্লাস্টিক জাতীয় কোন আবর্জনা ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন সাথে করে নিয়ে এসে যথাযথ জায়গায় ডাম্প করতে।