।। ধনবাড়ী জমিদার বাড়ী।।
বংশাই আর বৈরান নদীর যৌবনের স্বাক্ষী হয়ে ঢাকা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে টাঙাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় ধনবাড়ী জমিদার বাড়ী অবস্থিত। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী'র (১৮৬৩-১৯২৯) অমর কীর্তি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ী বা নওয়াব প্যালেস। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রন করার জন্য তিনি এ জমিদার বাড়ীটি তৈরী করেছিলেন। প্রাচীন এ জমিদার বাড়ীটি মোঘল স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্যে নির্মিত। এটি দক্ষিণ মুখী চার গম্বুজ বিশিষ্ট এবং দীর্ঘ বারান্দা সংবলিত। আলাদা প্রাচীর ঘেরা অংশে দুটি আবাসিক ভবন আছে। আছে ফুল বাগান, বৈঠক খানা, নায়েব ঘর ও কাছারিঘর। এখানের বৈঠক খানায় লর্ড হার্ডিঞ্জ সভা করেছেন। পুরো নবাব বাড়ী প্রাচীর ঘেরা। পাশেই আছে ৩০ বিঘার বিশালকার দীঘি।
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী তিনটি বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রী সকিনা খাতুনের গর্ভে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী ও উম্মে ফাতেমা হুমায়রা নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। ১৯২৯ সালে মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি তার জমিদারী দুই সন্তানের নামে ওয়াকফ করে যান। সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প মন্ত্রী এবং ১৯৭৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে তার মৃত্যুর পর একমাত্র কন্যা সৈয়দা আশিকা আকবর জমিদার বাড়ীর মালিকানা লাভ করেন। তিনি পিতা সৈয়দ হাসান আলীর নামে ধনবাড়ী জমিদার বাড়ীটি "নবাব সৈয়দ হাসান আলী রয়্যাল রিসোর্ট " নামে গড়ে তোলেন। রিসোর্টে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা। পিকনিক স্পট হিসাবে এটি এখন বেশ জনপ্রিয়।
জমিদার বাড়ীর পাশেই আছে ৭০০ বছরের পুরনো মসজিদ। মোঘল স্থাপত্যে তৈরী মাঝারি আকৃতির কারুকাজমন্ডিত এ মসজিদটি পুরোটাই কড়ি দিয়ে জড়ানো। মেঝেতে মার্বেল পাথরের নিপুন কারুকাজ। মসজিদের পাশেই নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর। ১৯২৯ সালে মৃত্যুর পর থেকে অর্থাৎ ৮৯ বছর ধরে কোরান তেলওয়াত বন্ধ হয়নি সেখানে। বর্তমানে ৭ জন ক্বারি নিযুক্ত আছেন। তারা প্রতি ২ ঘন্টা পরপর একেকজন কোরান তিলাওয়াত করে থাকেন।
আজ জমিদারী প্রথা নেই। নেই জমিদারী শান শওকত। তবে ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে একদিন ঘুরে আসতে পারেন এ জমিদার বাড়ী।