নিজে যখন বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছিলাম
নিজে যখন বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছিলাম
তখন ই মা আবার অন্তঃসত্ত্বা হলেন!
বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে আশপাশের
কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিলাম
না। মা বাবাকেও কিছু বলার সাহস ছিল
না। মা যখন উঁচু পেটটা নিয়ে সামনে
আসতেন তখন আমি মাথা নিচু করে
থাকতাম।মাঝেমাঝে ইচ্ছে হত পালিয়ে
বাঁচি। চাচীরা ব্যাঙ্গাত্নক সুরে বলত "এই
বয়সে আইসাও বিইয়াতে মন চায়"! তাদের
তাচ্ছিল্যের শব্দ ধারালো সুচের মত যেয়ে
আমার কানে বিঁধত। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে
পড়া ছোট বোনটা এসব কথা শুনে চুপিসারে
কাঁদত, আমি টের পেতাম কিন্তু সান্ত্বনা
দেবার মত কোন শব্দ আমার তখন জানা ছিল
না। মা, বাবার সাথে এই নিয়ে কখনো কোন
কথা বলিনি, তবে আমাদের ভেতর কী
চলছিল সেটা তারা বেশ টের পেতেন।
বেসরকারি হাসপাতালে মায়ের ছোট
মেয়ে সন্তানটা হয়েছিল, ছোটবোন আর
আমি নিয়ম রক্ষার্থে একবার সেখানে
হাজিরা দিয়ে চলে এসেছিলাম।
খালামণি আমাদের বাড়িতে মায়ের
দেখাশোনা করতে আসায় আমি আর
ছোটবোন চাচার বাসায় বেড়াতে
গিয়েছিলাম, বস্তুতপক্ষে সেটা ছিল
"পালানো"। এর মাঝে একদিন বিকেলে
বাবা ফোন দিয়ে বললেন "বাড়িতে চলে
আসো, আমার মেয়েটা চলে গেছে"।
বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি
সেদিন, দ্রুত বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলাম
দুজন। ছোটবোনটার চোখে পানি ছলছল
করছিল,আমার গলাটা কেমন যেন ধরে
এসেছিল সেদিন।কোথা থেকে সদ্য জন্ম
নেয়া বোনটা সেদিন খুব টানছিল
আমাদের। ছোটবোনটা পাগলের মত চিৎকার
করে বলেছিল "মা...ও কোথায়"? মা
বিছানা থেকে উঠে এসে দুজনকে একসাথে
জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন "তোমার
খালামণি বন্ধ্যা জানোই তো,তোমাদের
বোনটাকে তাকে উপহার দিয়েছি" । মায়ের
পায়ের কাছে গোঙাতে গোঙাতে পড়ে
গিয়ে সেদিন বলেছিলাম "না মা, আমাদের
বোনকে দিব না মা"। মা প্রতিত্তরে
বলেছিলেন "আমার বোনটার কাছ থেকে
তাকে ছিনিয়ে নিওনা, আমার বোনটাকে
আমিও তোমাদের মত ভালোবাসি যে"।
বাবা, মায়ের পা ধরে সেদিন মাফ
চেয়েছিলাম দুজন, অনেক কেঁদেছিলাম
নিজেদের করা মস্ত বড় ভুলটার জন্য। বাবা
সেদিন ছাই রঙের শার্টের হাতায় চোখ
মুছে বলেছিলেন "তোরা ভুল করে করে
শিখবি আর আমরা ভুলটা ধরিয়ে দিব বলেই
তো তোদের বাবা মা আমরা"।
আজ সাতবছর পেরিয়ে আমিও সেই কাজটাই
করলাম যেটা করেছিলেন আমার মা। আমার
ছোট বোনটাকে আমার দেড় মাসের
ছেলেটাকে সারা জীবনের জন্য দিয়ে
এসেছি। আমার স্ত্রীর এক চোখে ছিল
সন্তান দানের আর্তনাদ আর অন্য চোখে
ছিল গর্বের পানি!